Tumgik
banglapath · 4 years
Text
লোকনিরুক্তি ১
দেবদাস মিস্ত্রি
সদ | সাত | সাধ | স্বাদ | সাধভক্ষণ | ধানসদ
শ্রৎ-√ধা+অ+আ = শ্রদ্ধা। শ্রৎ অর্থ ভক্তি ও √ধা অর্থ ধারণ করা। সম্রাট বিক্রমাদিত্যের নবরত্নসভার অন্যতম সভাসদ অমরসিংহের শব্দকোষে শ্রদ্ধা অর্থ অতিশয় বিশ্বাস বা ইচ্ছা। Monier Monier-Williams তাঁর A Sanskrit-English Dictionary-তে শ্রদ্ধা-র অর্থ করেছেন faith, confidence, loyalty, wish, desire of eating [appetite], longing of a pregnant woman, ইত্যাদি; সাধ-এর অর্থ করেছেন accomplishment বা fulfilment; এবং স্বাদ-এর অর্থ করেছেন taste। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এও শ্রদ্ধা শব্দটির অর্থ প্রায় এক। সেখানে শব্দটির ৪ নম্বর অর্থ স্পৃহা বা আকাঙ্ক্ষা, ৫ নম্বর অর্থ গর্ভিণীর ভক্ষ্যবিশেষে ইচ্ছা, দোহদ বা সাধ, ও ৬ নম্বর অর্থ বুভুক্ষা। এবার শব্দটির তালাশ নেওয়া যাক যশোর-খুলনার লোকভাষায়। এখানে শ্রদ্ধা-জাত ছেদ্দা-র অর্থ রুচি বা খাওয়ার ইচ্ছা। দুটি বাক্যে ছেদ্দা-র প্রয়োগ দেখে আমরা তার অর্থ পরখ করবার চেষ্টা করবো। প্রয়োগ ১ : তোর বাপের সাতে কতা কতি আমার ছেদ্দা অয় না। প্রয়োগ ২ : তোমার ব্যানোনের [ব্যঞ্জন | তরকারি] ছিরি দে’হে আমার ছেদ্দা লাগদেচে না।
সম্প্রতি আমি আরও কয়েকখানি সংস্কৃত অভিধানে সন্ধান নিয়ে দেখলাম, ইচ্ছা-অর্থে সাধ শব্দটি পাওয়া যায় কি না। কোথাও পাওয়া গেলো না। তবে সম্পাদন-অর্থে শব্দটির অস্তিত্ব রয়েছে। এর থেকে আমার ধারণা হয়েছে, ইচ্ছা অর্থে সাধ শব্দটি অর্বাচীন ও তদ্ভব। ইচ্ছা বা অভিলাষ ও সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য রুচিকর ভোজ্যআয়োজনের আচার– এই দুটি অর্থসাম্য এবং অবশ্যই রূপসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি ক’রে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, সাধ শব্দটি শ্রদ্ধা-র তদ্ভব রূপ। এ ব্যাপারে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অধিকাংশ আভিধানিকের মতও অভিন্ন। তবে প্রখ্যাত আভিধানিক জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস উভয় অর্থে সাধ শব্দটিকে সংস্কৃত ব’লে চিহ্ণিত করেছেন, এবং গোলাম মুরশিদ-সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক অভিধান’-এ আকাঙ্ক্ষা-অর্থে শব্দটি সংস্কৃত ও গর্ভবতী নারীকে সুস্বাদু খাদ্যাদি খাওয়ানোর অনুষ্ঠানবিশেষ-অর্থে স্বাদ-জাত তদ্ভব ব’লে অভিমত দেওয়া হয়েছে। এখানে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়, ইচ্ছা- বা অভিলাষ-অর্থে সাধ শব্দটি সান্তালীজাত কি না। সান্তালীতে সাদ অর্থ ইচ্ছা বা লালসা। শব্দটি কি সংস্কৃত শ্রদ্ধা থেকে বাঙলা হয়ে সান্তালীতে গেছে, না কি সান্তালী সাদ থেকে বাঙলা সাধ এসেছে?
এবার আমরা লোকনিরুক্তি সম্পর্কে দুচারটি কথা জেনে নেবো। অপরিচিতি বা ব্যুৎপত্তি-বিস্মৃতির কারণে অনেক সময়ে মানুষ তার পরিচিত, প্রায়োগিক অর্থে সমতুল ও প্রায়-সমোচ্চারিত শব্দের আদলে কোনো-কোনো শব্দের বানান বা উচ্চারণ বদলে ফেলে– যেমন সংস্কৃত বিস্ফোটক থেকে বাঙলা বিষফোড়া শব্দটির জন্ম। বিস্ফোটক শব্দটির ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই বি-√স্ফুট্(বিকশিত হওয়া)+অক বা বি+স্ফোটক। বি বলতে আমরা বিশেষ বুঝি ও স্ফোটক অর্থ ফোড়া। এর সঙ্গে বিষের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু মানুষ বিশেষ একপ্রকার ছোটো ফোড়ার বিষজ্বালা ও শব্দদুটির উচ্চারণ-সাম্যের প্রভাবে বিস্ফোটককে বিষফোড়া বানিয়ে ফেলেছে। যশোর-খুলনার মানুষ পোয়াতিকে যখন নানা স্বাদের খাবার খাওয়ায় তখন তাদের কাছে ক্ষেত্রবিশেষে সাধ হয়ে যায় স্বদ বা সদ। স্বাদ-কে তারা সদ বলে। তাই ধানসাধ তাদের কাছে ধানসদ। ধানসদ মূলত একধরনের কৃষিআচার। আশ্বিন মাসের শেষ তিনদিন বাচ্চারা গর্ভবতী ধান্যমাতার উদ্দেশে হালই বা হালো ছড়া কাটে, সঙ্ক্রান্তির দিন অর্থাৎ মাসের শেষদিন বাড়িতে পিঠে-পায়েস রান্না হয়, এবং পহেলা কার্তিক ভোরে ধান্যলক্ষ্মীকে সাধভক্ষণ করানো হয়। চাষী ধান্যলক্ষ্মীর রূপচর্চার জন্য ব্যবস্থা করে আমের আটির শাস, সোন্দাল- বা সোনালু-বিচির গুঁড়ি, বটের পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে তৈরী আমড়া-সোন্দা-বটের-পাতা এবং তেল, সিন্দুর ও কাজল; মায়ের রসনাতৃপ্তির জন্য গতরাতের পিঠে-পায়েস-চালের গুঁড়ি, তালের আটির শাস, আখ ও বাতাবি লেবু; এবং সজ্জার জন্য শোলার ফুল।
সাধভক্ষণের ক্ষেত্রে যশোর-খুলনার লোকভাষায় আরও একটি লোকনিরুক্তি ঘটেছে। গর্ভধারণের সপ্তম বা সাত [সাততম] মাসে আত্মীয়-স্বজন পোয়াতিকে সাধ খাওয়ায়। গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীও ওইদিন আগত জ্ঞাতিবন্ধুর জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করে। তাই সাধ তাদের কাছে সাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ থেকে এখানে সাধভক্ষণ ও গর্ভোন্নয়নের মাসভিত্তিক একটি বর্ণনা উদ্ধার করলাম : প্রথম মাসের গর্ভ জানি বা না জানি/ দ্বিতীয় মাসের বেলা করে কানাকানি।/ তৃতীয় মাসের বেলা করে ভূতলে শয়ন/ চারি মাসে করে রামা মৃত্তিকা ভক্ষণ।/ পাঁচ মাসে নিদয়ারে না রুচে উদন/ ছয় মাসে কাঞ্জী করঞ্জায় জায় মন।/ সাত মাসে রসবাস দিল ধর্মকেতু/ জ্ঞাতি বন্ধু সবে সাধ দেই শুভ হেতু।/ আট মাসে নিদয়ার বাড়্যা জায় পেট/ চলিতে না পারে না চাহিতে পারে হেট।/ নয় মাসে নিদয়ারে সাধ দেই ব্যাধ/ নিদয়া স্বামীরে কহে ভাবিয়া বিষাদ॥
পরিশেষে আমরা কিছু আশ্বিনী হালই দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। হালো ছড়াগুলির উদ্ধৃত রূপটির সঙ্গে যশোর-খুলনার অভয়নগর, মণিরামপুর, ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার একটি বড়ো জনগোষ্ঠী পরিচিত।
আশ্বিন গেলো, কাতি [কার্তিক] পোলো [পড়লো], মা নক্ষ্মী গর্বে [গর্ভে] পোলো। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
১ উত্তরেত্‌তে [উত্তর থেকে] আইলো টিয়ে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে। টিয়ে যদি মনন করে, উন্নু মাটি চুন্নু [চূর্ণ] করে। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
২ নাঙলেতে যেমন-তেমন, বাশইতি [বাঁশইয়ে বা মইয়ে] সই, ধানের নাম বেগমপালা, মাতায় [মাথায়] এ’রে [ক'রে] বই। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
৪ আমড়া [আমে-আটির শাস] সোন্দা [সোন্দাল-বিচির গুঁড়ি] বটের পাতা, ধান ফোলেচে [ফুলেছে] আড়ই-হাতা। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
৫ নো'য়ো নেই, ডিঙি নেই, পার অবো কীসি [কীসে], ওই পারে ধান ফোলেচে নাম্বা-নাম্বা শিষি [শিষে]। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
৬ ধানের নাম কলমকাটি, এক-এক গোচে [গোছে] এক-এক আটি। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই…
৭ উত্‌তোরে [উত্তুরে] বাতাসে ধুতরোর ফুল ফোটে, তা দে'হে [দে'খে] মন আমার চমকে দোলে। মা নক্ষ্মী ধানসদ [সাধ] খায়রে হই
…............................................................
কৃতজ্ঞতা-স্বীকার
❑ Debprosad Biswas 
(দেবদাস মিস্ত্রির ডাক : শুভ সাধভক্ষণ, হে অন্নসম্ভবা প্রাণদা ধান্যমাতা! মা নক্ষ্মী ধানসদ খায়রে হই...)
বানান কোনটা হবে? একটু জানালে ভাল হত। মনে হয় ধান-স্বাদ।
(দেবদাস মিস্ত্রির প্রতিক্রিয়া : শব্দটি স্বাদ নয়, সাধ। মানভাষার সাধ [সাধভক্ষণ] বটিয়াঘাটার লোক-উচ্চারণে হয়েছে সদ [ধানসদ] বা সাত। সাধ [সাত] খাওয়ানোর অনুষ্ঠানে সন্তানসম্ভবা মাকে তার সাধ মিটিয়ে খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। সাধারণত গর্ভধারণের সপ্তম [সাততম] মাসে মায়েদেরকে সাধ [সাত] খাওয়ানো হয়ে থাকে।)
দেবদাস মিস্ত্রি আমার বাড়ি বান্দা এলাকায়। তাই আমিও জানি বিষয়টা। কিন্তু জানতে ইচ্ছে ছিল স্বাদ> সাধ>সাথ> সাত> সত কোন টা? স্বাদ হল - টেস্ট। সাধ হল ইচ্ছে, সাত হল সংখ্যাবাচক, সাথ মানে সাথে। সত মানে এলাকা ভিত্তিক এর মানে পালটে যেতে পারে। সদ > স্বাদের অপভ্রংশ কিনা ? এসব একটু জানার ইচ্ছে
❑ Swadesh Anarjo 
সুন্দলীও এমন উচ্চারণ
❑ Dipu Mondol 
আমি যতদূর জানি শব্দটা "স্বাদ"হবে।মানে গর্ভবতীকে বিভিন্ন স্বাদের খাবার খাওয়ানো হয়।লোকাল ভাষায় "সদ"বলে।
❑ Tusar Kanti Das 
সাধ মিটিয়ে খাওয়ানো কেন ? আসন্ন প্রসবযন্ত্রনাজনীত মৃত্যুর আশঙ্কায়?
(দেবদাস মিস্ত্রির প্রতিক্রিয়া : গর্ভবতী মায়েরা যাতে সুস্থ ও প্রসন্ন থাকে, সেই লক্ষ্যে এই প্রসাদ-আয়োজন। অবশ্য, আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক। 'সাধ মিটিয়ে' না ব'লে আমার বলা উচিত ছিলো 'সাধমতো'। ধন্যবাদ, দাদা।)
দেবদাস মিস্ত্রি আপনার শব্দপ্রয়োগ নিয়ে আমার বক্ত‍ব‍্য কিছু মাত্র নেই। আমি ব‍্যাঙ্গার্থেও বলিনি কিছু। আমি শুধু আমার এই ভঙ্গ বঙ্গের রঙ্গ ব‍্যাঙ্গে হতভাগিনী মাতৃকুলের বাস্তব জীবনের প্রতিলিপির আভাস দেয়ার চেষ্টা করেছি। জননী জনন রণে পরাজয় ভিক্ষা মাগে নিতি, এ কী রঙ্গ জীবনের জন্মদাত্রী সনে
❑ Milan Ray 
বানান টানান শুদ্ধ অশুদ্ধ যাই হোক না কেন । এখন ছেলে মেয়েরা আমরা এই দিনে যে আনন্দ পেতাম সেটা পায়না। এমন কি এ দিনে পিঠা পুলির যে উৎসব হয় সেটিও আমরা ভুলতে বসেছি।
0 notes
banglapath · 4 years
Text
Svaragāna
Debdash Mistry
I might sound queer; but to me, singing or playing or listening to a piece of music is somewhat synonymous with crying– crying for somebody or something not clearly made out– somebody or something our hearts ache for but perception fails to reach. If the gap between the singing souls and the sung [celebrated] collapses, ART disappears and things fall mundane. True, mundanity is never less valuable. Rather, it ignites our thirst for invaluable BEAUTY, and in return, BEAUTY releases our pent-up emotions and gives back to us a serene mundanity.
You have all the right to disagree. Even you can tag me as a mystic, though I hardly know what I am. I must admit that BEAUTY does not feed me, and that I have to earn my bread by the sweat of my brow. Despite all these, there are some occasions when my heart sobs uncontrollably for somebody or something behind some mysterious veil. And whenever I can sob my heart out, I feel relieved. To speak the truth, yours is the purest soul in the world the moment you groan with a pain and cry your eyes out, and svaragānas can help you feel pure at least for a moment. Just forget about all your egoistic identities and get absorbed in the music you are making or hearing– your submission will automatically report to the court of SUNDARA, alias BEAUTY.
To be more specific, let us go a bit deep into gāna and svara. A gāna or a song, as perceived by the musical minds of the Indian subcontinent, is a composite of svara [note or musical tone], tāla [rhythmic beat or time-measure] and pada [lyrics]. Of the three, svara is the most important one, and to my mind, a good arrangement of some harmonious svaras is itself a gāna. So svara needs to be detailed here. For the beginners in music literature, when a human voice or an instrument makes a sound of some pitch, the sound is a svara. Suppose you tune a string to a pitch and strike it, you will hear a series of sounds in the same pitch. The series is a svara, and every bit of sound is a śruti. There are twenty-two śrutis or even more in a saptaka [ octave]; and seven svaras there– Sa, Re, Ga, Ma, Pa , Dha, Ni. Re is three śrutis away from Sa. In non-technical terms, svara is otherwise named sura or tune.
Now it is time for svaragāna. When my heart cries, I sit back with pain melting slowly into a gāna. But sometimes the chaos of tāla [rhythmic beat] breaks my meditation, and the words of pada [lyrics] lead other way the channel to my SUNDARA in the dark. Therefore, I prefer svaragāna– a gāna free of the chains of tāla and pada. Of course, svaragāna can accommodate tāla and pada if the latter are submissive and unvoiced. We can also reconsider the status of tāla when laya or tempo slows down to the limit so that percussionists fail to stay on the beat. Ālāpa can be a perfect example of svaragāna when Rabindra muktaga [dhālāgāna of Tagore] and Bhatiali are accommodating.
With an unhurried gait Bhatialis sometimes tend to be unmetered and unaccompanied like ālāpa. But Bhatialis are more emotive. When a Bhatial, a singing boatman or a Bhatiali singer, stretches the last svara of a phrase, there dawns a serene silence; and all of a sudden when his voice accompanied by giṭkāri reaches a higher svara from a lower one, the silence cracks with a heart-rending cry. For further information, a giṭkāri is a cluster of svaras used in some musical genres like ṭappā. But Bhatiali is unique in the sense that periods between svaras in its gitkāri are a bit lengthier and the svaras here are more stressed, and so its giṭkāri very often sounds like sobbing.
There is still a good example of svaragāna in my locality. Sometimes while rowing boats, ploughing fields or doing household chores, our people sort of sing, or rather hum, Bhatialis, uttering some meaningless sounds. But these sounds go beyond meaning and can speak their mind effectively. In fact, svaragāna is itself a lingua franca without diction– it hardly needs any support from wording. It can be passed to any heart irrespective of language, culture and race. More importantly, our folk do not sing this type of song to entertain a houseful of audience but to privately sob their sore hearts out to their beloved in the dark. Actually, their svaragāna relentlessly searches for somebody they can submit their crucified self to.
Back to SUNDARA, the term is derived from a Sanskrit root √dṛ, which means ‘to caress’ or ‘to love’. So SUNDARA is something or somebody we love to melt into but can never reach. You can argue here that SUNDARA is an immature imagination of an unsatisfied mind. Maybe you are right. But it means little difference to me. I still feel somewhere in my heart a longing for the unknown under debate.
0 notes
banglapath · 4 years
Text
আমার পরিভাষা : লিখতে লিখতে সঞ্চয় ২
দেবদাস মিস্ত্রি
১। স্বয়ংযন্ত্র। computer
২। স্বয়ংযান্ত্রিক। digital ▯ গোটা পৃথিবী এখন স্বয়ংযান্ত্রিক। স্বয়ংযান্ত্রিকীকরণ। স্বয়ংযান্ত্রিকীকৃত
৩। জলিকাক্ষেত্র। network
৪। জালিকাকক্ষ। website
❑ আন্তর্জাল (অনুকৃত)। Internet
❑ অন্তর্জাল (অনুকৃত)। intranet
❑ আন্তর্জালিক। আন্তর্জালে (অনুকৃত)। online ▯ আন্তর্জালিক কর্মকাণ্ড। আন্তর্জালিক বিপনন। আন্তর্জালে কেনাকাটা করা
৫। আন্তর্যোগ । email
৬। ছায়া-। virtual ▯ ছায়াবিশ্ব। ছায়াপাঠাগার। ছায়াবিদ্যালয়
৭। কায়া-। real ▯ কায়াবিশ্ব
৮। তথ্যক। data
৯। কোষিকা। pen drive
১০। অধঃকোষ। download ▯ অধঃকোষ। অধঃকোষ করা
❑ নামানো (প্রচলিত)। download
১১। ঊর্ধ্বকোষ। upload ▯ ঊর্ধ্বকোষ। ঊর্ধ্বকোষ করা
❑ প্রবেশ করা (প্রচলিত)। log in। sign in
❑ নিবন্ধন করা (প্রচলিত)। sign up
#পরিভাষা ২
#পরিভাষাকোষ 
1 note · View note
banglapath · 5 years
Text
সকল নিয়ে ব’সে আছি। বর্ষামঙ্গল ১৪২৬। ড. বাদল প্রামাণিক
youtube
সঙ্গীতসন্ধ্যা : সকল নিয়ে ব’সে আছি উপলক্ষ্য : বর্ষামঙ্গল ১৪২৬ কলাকার : ড. বাদল প্রামাণিক ধারা : শাস্ত্রীয় ও আধাশাস্ত্রীয় সঙ্গীত (কণ্ঠ)– খেয়াল, টপ্পা ও ঠুঙরি আয়োজক : বাঙলাপাঠ স্থান : উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন, খুলনা, বাংলাদেশ
সঙ্গীতসূচি ১। খেয়াল– রাগ দেশ ২। দুটি বাঙলা বন্দেশ– রাগ জয়জয়ন্তী ৩। শোরি মিয়ার টপ্পা ৪। নিধু বাবুর টপ্পা ৫। রবীন্দ্রনাথের টপ্পা ৬। নজরুলের টপ্পা ৭। ঠুঙরি– রাগ পিলু ৮। ঠুঙরি– রাগ খাম্বাজ ৯। ঠুঙরি– ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর রচনা
Title of the Soirée : Sakol Niye Bose Achhi Occasion :  Barshamongol (Rain Festival) Genre : Classical and Semiclassical Music (Vocal)– Kheyal, Tappa and Thumri Artiste :  Dr. Badal Pramanik Organiser : Banglapath Venue : Umeshchandra Public Library Auditorium, Khulna, Bangladesh
Rendition Index 1. Kheyal‒ Raaga Desh 00:04:29 2. Two Bangla Bandishes‒ Raaga Joyjoyonti 00:30:43 3. Shori Miya's Tappa 00:38:29 4. Nidhu Babu's Tappa 00:42:16 5. Tagore's Tappa 00:46:18 6. Nazrul's Tappa 00:49:37 7. Thumri‒ Raaga Pilu 00:56:09 8. Thumri‒ Raaga Khamaj 01:01:32 9. Thumri‒ Ustad Bade Ghulam Ali Khan's Composition 01:07:05
2 notes · View notes
banglapath · 7 years
Text
স্বকণ্ঠে বিজয় সরকার
কণ্ঠ
youtube
কথা
আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে এলো- ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ- [আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে এলো- ও এলোরে এলো আবার দুরন্ত শ্রাবণ,] এমনই দিনে লেগেছে মনের কূলে ভাঙন- [ও এলোরে- আমার এমনই দিনে লেগেছে মনের কূলে ভাঙন- ও এলোরে এলো আবার দুরন্ত শ্রাবণ, আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে এলো- ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ।]
চূর্ণি নদীর ঘূর্ণিপাকে যেথা পড়লো চর, সেই চরেতে বেঁধেছিলাম বসতি এক ঘর- [চূর্ণি নদীর ঘূর্ণিপাকে যেথা পড়লো চর, সেই চরেতে বেঁধেছিলাম বসতি এক ঘর।] সে ঘর ভেসে গেলো দিন কয়েক পর এসে এক প্লাবন- [ও এলোরে- সে ঘর ভেসে গেলো দিন কয়েক পর এসে এক প্লাবন- ও এলোরে এলো আবার দুরন্ত শ্রাবণ, আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে এলো- ও এলোরে- - - আমার এমনই দিনে লেগেছে মনের কূলে ভাঙন- ও এলোরে এলো আবার দুরন্ত শ্রাবণ।]
[ছাড়া] ছাড়া ভিটে, হিজল গাছে জলপরি কন্যা উদাস চোখে চেয়ে দেখে শ্রাবণের বন্যা- [ছাড়া ভিটে, হিজল গাছে জলপরি কন্যা উদাস চোখে চেয়ে দেখে শ্রাবণের বন্যা।] আমি কাঁদি তাহার কান্না, তার কি নাই কাঁদন- [ও এলোরে- আমি কাঁদি তাহার কান্না, তার কি নাই কাঁদন- ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ।]
মেঠো আগুন নেভেরে জলের ছিটে লেগে, রাবণের চিতে নেভে না শ্রাবণের মেঘে- [মেঠো আগুন নেভেরে জলের ছিটে লেগে, রাবণের চিতে নেভে না শ্রাবণের মেঘে।] ও সে আগুন জ্বলে দ্বিগুণ বেগে- দুঃসহ দাহন- [ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ- ও সে আগুন জ্বলে দ্বিগুণ বেগে- দুঃসহ দাহন- ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ।]
শ্রাবণ ওই আসিলো ফিরে একটি বছর পর, ফিরে আসার আশা নাইরে জলে ভাসা ঘর- [শ্রাবণ ওই আসিলো ফিরে একটি বছর পর, ফিরে আসার আশা নাইরে জলে ভাসা ঘর।] পাগল বিজয় বলে এমনতর বিধাতার বাঁধন- [ও এলোরে- পাগল বিজয় বলে এমনতর বিধাতার বাঁধন- ও এলোরে এলো আবার ঘরভাঙা শ্রাবণ- আষাঢ়ের কোন ভেজা পথে এলো- ও এলোরে এলো আবার দুরন্ত শ্রাবণ॥]
0 notes
banglapath · 7 years
Text
ধ্রুবপদ ১ : তবু মনে রেখো
দেবদাস মিস্ত্রি
▯ ঢালাগান  ▯ বৈতালিক  ▯ মুক্তগ  ▯ রবীন্দ্রমুক্তগ  ▯ টপ্পা  ▯ আলাপ  ▯ ভাটিয়ালি  ▯ জাতীয় সঙ্গীত 
আমি বড়ো হয়েছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং বিজয় সরকারের গান শুনে। অখণ্ড মনোযোগের সঙ্গে তখন শুনেছি রামপ্রসাদ ও রজনীকান্ত। কখনো-কখনো এমনও হয়েছে, রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুনবার জন্য কলেজের ক্লাস পর্যন্ত ফাকি দিয়েছি। চারদিকে তখন গান আর গান। রণজিৎ দেবনাথের ছাত্রদের রেওয়াজের কল্যাণে আমরা তখন ভৈরবী আর দরবারি কানাড়ার মেজাজ আলাদা করতে পারতাম। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন নামকীর্তনের এমন চল হয়নি। পাড়ায়-পাড়ায় তখন কবিগান আর পালাকীর্তন লেগে থাকতো। রাত জেগে বড়োদের সঙ্গে আমরা ছোটোরাও শুনতাম রামায়ণ, গাজিগান আর বেহুলার ভাসান। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দিনভর মাইকে বাজতো হেমন্ত, মান্না দে, লতা, গীতা, সন্ধ্যা, পান্নালাল থেকে নুরজাহান ও সামসাদ বেগম অব্দি। অঘ্রান-পৌষে বাড়িতে যখন ধান উঠতো, তখন গানের নানারকম উপলক্ষ্য তৈরী হতো– হরির লুট, উজোগারি, ত্রিনাথের মেলা, ঠাকুরের চিনি, আরও কতো কী! প্রায় প্রত্যেক পাড়ায় তখন একটা না একটা বাড়ি থাকতো, যেখানে সন্ধ্যায় রসিক বয়স্কজন জড়ো হয়ে বিজয়, রসিক, অনাদি, অশ্বিনী ও তারককর্তার গান করতো এবং বুক খালি ক’রে কাঁদতো। বিভিন্ন আচার-পার্বণের গানও আমরা কম পাইনি। পৌষসঙ্ক্রান্তি উপলক্ষ্যে আমরা ছোটোরা গড়তাম শুভ্‌রের দল, আর চৈত্রসঙ্ক্রান্তিতে একহাঁটু ধুলো নিয়ে বড়োদের অষ্টকের দলের পিছু-পিছু সারাদিন গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম। সে এক গানের সময়! চৈত্রমাসে মা-কাকী-দিদিরা যখন ভাটির গান গেয়ে গ্রামের নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিচ্ছে, আমরা তখন নদীর স্রোত কেটে আচারের সেইসব ফুল ধরবার জন্য সাঁতার পাল্লা দিচ্ছি। এখনও মনে পড়ে, সাত-আট বছর বয়স অবধি মায়ের হাঁটুতে মাথা রেখে তার ভিজে-ভাঙা গলার বিয়ের গান শুনছি: নৌকো খটোরমটোর শুনতেচি, / বইটেক ঝিকিরমিকির দেকতেচি– / কান্দেলো সোনার বালি শানে আছাড় খা’য়ে। / ভাইডির দন্যি [জন্যি] আম���র জ্ব’লে যায়, / বুনডির দন্যি আমার পুড়ে যায়– / কান্দেলো সোনার বালি... ॥
এই শোনাটুকুই আমার সঙ্গীতপুঁজি। সঙ্গীত বিষয়ে পড়ার পুঁজি যা আছে, তা যৎসামান্য, যার মধ্য থেকে করুণাময় গোস্বামীর ‘সঙ্গীতকোষ’-এর নাম না নিলে, বোধ করি, অপরাধী থেকে যাবো। সঙ্গীতে অধিকার বলতে যা বোঝায়, তা হয়তো আমার নেই; তবু একজন একনিষ্ঠ শ্রোতা হওয়ার কারণে আমার মনে এই প্রতীতি জন্মেছে যে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না। সরল সমর্পণই তাঁর গানের প্রাণ। এমন মধুর আত্মনিবেদন বিশ্বসঙ্গীতের আর কারো গানে আছে কি না, আমি জানি না। একটু কান পাতলেই বোঝা য়ায়, বাণী ও সুরের এক অভূতপূর্ব দাম্পত্য-সংযম তাঁর সঙ্গীতকে ক’রে তুলেছে স্বতন্ত্র। এখানে কেউ কাউকে ছাপিয়ে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করে না। এখানে দোহে মিলে একপ্রাণ। আর সব এহ বাহ্য। রবীন্দ্রনাথের কানে, আমার কেনো জানি মনে হয়, তালও কখনো-কখনো কোলাহলের মতো বাজতো। তাই তিনি হয়তো সারাজীবন তাল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, নিজেও ছয়টি তাল তৈরি করেছেন– অবশ্য উল্টোষষ্ঠীকে ষষ্ঠী থেকে ভিন্ন ধরলে সঙ্খ্যাটি হবে সাত, এবং শেষ জীবনে এসে তিনি নিজের টপ্পাঙ্গের গানগুলিকে ঢালালয়ে গেয়ে সঙ্গীতকে তালের কোলাহলমুক্ত করেছেন। গোড়াতে এই গানগুলি আড়াঠেকা, একতাল, ত্রিতাল, ঠুঙরি, তেওরা ইত্যাদি তালে বাঁধা হয়েছিল। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের প্রশ্রয়ে এগুলি ঢালারূপ নেয়। কবির কণ্ঠে আপনারা হয়তো ‘তবু মনে রেখো’ গানটি শুনে থাকবেন। কী ঐকান্তিক সঙ্গীতায়োজন! কোনো তাল নেই, কোনো যন্ত্রানুসঙ্গ নেই, কোনো শ্রোতা নেই। শুধু তুমি আর আমি। তোমাকে একান্তে ব্যথা জানাব ব’লেই এই অনুষ্ঠান। এই ধরনের গানকে পণ্ডিতেরা ব'লে থাকেন ঢালাগান। আমি এগুলিকে বলি মুক্তগ। আমার সকল নিয়ে ব’সে আছি, তোমায় নতুন ক’রে পাব ব’লে, শুধু তোমার বাণী নয়গো, মেঘের পরে মেঘ জমেছে, সার্থক জনম আমার, আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, যদি প্রেম দিলে না প্রাণে, আমি রূপে তোমায় ভোলাব না ইত্যাদি গান সাধারণত মুক্তগ ঢঙে গাওয়া হয়। তালমুক্ত গান হওয়ায় এদেরকে কেউকেউ বৈতালিক ব’লে ভুল ক’রে থাকেন। বৈতালিক আদৌ কোনো গানের ধরন নয়– বৈতালিক প্রকৃতপক্ষে একশ্রেণির গায়ক, যারা জাতকের কাহিনি বা কোনো বৌদ্ধ গাঁথা গানের মাধ্যমে পরিবেশন করতো, অথবা যারা স্তুতিপাঠ ক’রে রাজারানিদের ঘুম ভাঙাতো। এদের গান বা গুণকীর্তনও ‘বৈতালিক’ অভিধাযুক্ত। শান্তিনিকেতনে বিশেষ উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত শোভাযাত্রাকালে বৈতালিক পরিবেশিত হয়।
আপনারা হয়তো জানেন, ছান্দসিকরা কবিতার এক বিশেষ ধরনকে ‘মুক্তক’ অভিধা দিয়েছেন। নামটি সম্ভবত প্রবোধচন্দ্র সেন মহাশয়ের দেওয়া। কিন্তু অভিধাটি সার্থক নয়। শব্দটি হওয়া উচিত ‘মুক্তগ’। মুক্তগ অর্থ ‘যে মুক্ত গতিতে চলে’ বা ‘মুক্ত গমন যার’। যে-সমস্ত কবিতা নিয়মিত সমপার্বিক ছন্দের শাসনমুক্ত কিন্তু জোড়চলনে সততই গতিশীল, সেগুলিই মুক্তগ। বাঙলা আধুনিক থিয়েটারের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাট্যসংলাপের মধ্যে এই ছন্দের বীজ সুপ্ত থাকলেও রবীন্দ্রনাথই প্রকৃতপক্ষে মুক্তগের প্রতিপালক ও অভিভাবক। পরবর্তীতে জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আমরা দেখতে পাই ছন্দটির এক নিপুণ কারিগরি। কবিতার মতো গানেও রবীন্দ্রনাথ মুক্তগের প্রতিপালক। গানকে তিনি তালের বন্ধনমুক্ত ক’রে নতুনভাবে প্রেয়কে আস্বাদনের চেষ্টা করেছেন। সৃষ্টির প্রয়োজনে প্রথা ভাঙায় তাঁর জুড়ি নেই। একদিকে তিনি যেমন বাঙলা গদ্যকবিতার জনক, অন্যদিকে তেমন গদ্যকে সুরে গেয়ে তিনি গদ্যগানের জন্ম দিয়েছেন। এমন অসাধারণ দক্ষতায় তিনি গদ্যকে সঙ্গীত ক’রে তুলেছেন যে, শ্রোতাকে পূর্বভাগে ব’লে না দিলে তার খেয়ালই হবে না, গানটির বাণী গদ্য ছিল। আমি কতো-কতো দিন তাঁর "মন মোর মেঘের সঙ্গী, / উড়ে চলে দিগ্‌দিগন্তের পানে / নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণসঙ্গীতে / রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম" অথবা “এসো শ্যামল সুন্দর / আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা / বিরহিণী চাহিয়া আছে আকাশে” শুনেছি, অথচ বোধেই আসেনি গানগুলি অন্ত্যমিলশূন্য। কী অনির্বচনীয় শিল্পচাতুর্য! আবার ‘চণ্ডালিকা’য় মা যখন নিখুঁত সুর-তাল-লয়ে প্রকৃতিকে প্রশ্ন করছে, “পোড়া কপাল আমার! / কে বলেছে তোকে ‘জল দাও’!”, তখন কানের বুঝে উঠতে কষ্ট হয়, নিছক একখণ্ড গদ্যকে রবীন্দ্রনাথ গানের নাম ক’রে অবলীলায় চালিয়ে দিলেন।
এখানে একটি প্রশ্ন আসে, রবীন্দ্রমুক্তগ কোন সঙ্গীতাদর্শে গ’ড়ে উঠেছে– আলাপ, টপ্পা, না ভাটিয়ালির? ভাঙাটপ্পাগুলি বাদে কবিগুরুর টপ্পাঙ্গের বাকি গানগুলি যেহেতু মুক্তগ হয়ে উঠেছে এবং গানগুলির নতুন সংস্করণেও গিটকারি [পরস্পর-ঘনিষ্ঠ স্বরগুচ্ছের দ্রুত উচ্চারণ] বা স্বরঘেষের ব্যবহার যেহেতু টপ্পানুগ, রবীন্দ্রমুক্তগের সঙ্গে টপ্পার সম্পর্ক সেহেতু জন্মসূত্রীয়, ফলে অনস্বীকার্য। তবে টপ্পার বাইরের কিছু গানও ইদানিং মুক্তগ ঢঙে গাওয়া হচ্ছে– যেমন, আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার। উল্লেখ্য, এই গানটি কবিগুরুর নিজের তৈরী তাল ঝম্পকে বাঁধা। এবার আসা যাক আলাপ প্রসঙ্গে। আলাপ যেহেতু অনিবদ্ধ বা তালবন্ধনমুক্ত একধরণের ধ্যানগম্ভীর বিলম্বিত রাগরূপ, সেহেতু রবীন্দ্রমুক্তগের সঙ্গে এর সম্পর্কের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে টপ্পায় ঢালালয় ব্যবহারের ব্যাপারে আলাপ রবীন্দ্রমানসে কতোটা প্রভাব রেখেছিলো, তা আজ বলা বেশ মুশকিলের। আলাপের মতো ভাটিয়ালিও হতে পারে রবীন্দ্রমুক্তগের প্রেরণা। ভাটিয়ালি বাঙালির নাড়ির সুর। আলাপের মতো তারও রয়েছে একটি ধীর নাতিচঞ্চল প্রবাহ, কিন্তু সে-প্রবাহ আলাপের চেয়ে ঢের করুণ ও হাহাকারময়। একগুচ্ছ অক্ষর পরপর উচ্চারণের পর ভাটিয়াল যখন ওই অক্ষরগুচ্ছের শেষ স্বরটি ধ’রে লম্বা সুরে টান দেয়, তখন চারদিকে ফুটে ওঠে এক শান্ত নির্জনতা। জগৎ-সংসারে তখন ভাটিয়াল আর তার অনামা দরদি ছাড়া কেউই থাকে না। সেইসঙ্গে হঠাৎ যখন ভাটিয়ালের কণ্ঠস্বর মুদরা থেকে তারায় পৌঁছায়, তখন নিমিষেই একটি বুকফাটা হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে সারা আকাশময়। ভাটিয়ালির মুখ্য উদ্দ্যেশ্য তাই শ্রোতারঞ্জন নয়। একান্তে কেঁদে হালকা হওয়ার জন্য এই গান। এইখানেই ভাটিয়ালির সঙ্গে রবীন্দ্রমুক্তগের সাদৃশ্য। রবীন্দ্রমুক্তগেও ভাটিয়ালির মতো পরপর একগুচ্ছ অক্ষর উচ্চারণের পর রয়েছে একটি প্রলম্বিত স্বর, এবং গানের মাঝে-মাঝে এখানে কান্নার মতো ডুকরে ওঠে টপ্পার গিটকারি। রবীন্দ্রমুক্তগ তাই একান্তে কাঁদবার আয়োজন।
পরিশেষে আমার একটি স্বপ্নের কথা বলবো। আমি স্বপ্ন দেখি এমন একজন কবির, যাঁর মুক্তগ আবৃত্তির সময়ে ভাষার শ্রেষ্ঠ বাকশিল্পী পর্যন্ত ভয়ে-শ্রদ্ধায় সচেতন হয়ে উঠবেন পাছে কবির কাব্যের নীরবতা ভেঙে পড়ে, এবং এমন একজন সঙ্গীতকারের অপেক্ষায় আছি, যাঁর মুক্তগ ভাটিয়ালির কান্না হয়ে নিরাবেগ পৃথিবীকে অশ্রুর আনন্দ ফিরিয়ে দেবে। আর তবেই হবে ছন্দের ও তালের কোলাহল থেকে কাব্য এবং সঙ্গীতের যথার্থ মুক্তি।
পুনশ্চ ১ বাঙালির নিজস্ব সঙ্গীতের কথা উঠলে যে-নামটি সর্বপ্রথম আসে, সেটি ভাটিয়ালি। নদীমাতৃক বাঙলাদেশে অর্থাৎ একসময়কার পূর্ববঙ্গের ভাটি-অঞ্চলে ভাটিয়ালির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমরা যদি বাংলাদেশের বর্তমান মানচিত্রের নৈর্ঋত (দক্ষিণ-পশ্চিম) থেকে ঈষাণ (উত্তর-পূর্ব) বরাবর একটি কাল্পনিক সরল রেখা টানি, তবে যে-অঞ্চলটি আমরা পাবো, সেটিই ভাটি অঞ্চল। তবে কীর্তিনাশা পদ্মার বিপ্রতীপ স্রোতের কারণে এই অঞ্চলটি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় উত্তরভাটি ও দক্ষিণভাটির ভাটিয়ালিতে গ'ড়ে উঠেছে কিছুটা স্বতন্ত্র গীতি-বৈশিষ্ট্য। আমার বাড়ি পদ্মার দক্ষিণে বৃহত্তর খুলনা-যশোর-ফরিদপুর অঞ্চলে। এখানকার সাধারণ মানুষ তাদের নিত্যকার কাজকর্মের মধ্যে কিংব��� অবসরে নিজেদের অজান্তে যে সাধারণ সুরটি প্রায়ই গুনগুন ক’রে গেয়ে ওঠে, সেটি বস্তুত সামান্য কীর্তন-মিশ্রিত ভাটিয়ালি। তাদের এই গুনগুনানি হয়তো কিছু অর্থহীন অক্ষরমাত্র, কিন্তু হাহাকারটি সঙ্ক্রামক ও মর্মভেদী। বিখ্যাত কবিয়াল বিজয় সরকারের সমস্ত ধুয়া ও বিচ্ছেদী গান এই সুরের কারণে বিশিষ্ট। এই সুর থেকে উত্তরভাটির ভাটিয়ালি কিছুটা স্বতন্ত্র ও অপেক্ষাকৃত অনুপ্রবেশমুক্ত। উল্লেখ্য, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের অংশ-বিশেষ নিয়ে উত্তরভাটি অঞ্চলটি গঠিত। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কালজয়ী সৃষ্টি সোনাবন্ধুরে, আমি তোমার নাম লইয়া কান্দি উত্তরভাটির ভাটিয়ালির এক অনন্য নিদর্শন। এমন বুকচেরা আর্তি প্রকাশ বাঙলার অন্যকোনো সঙ্গীতে, বোধ করি, সম্ভব নয়। সামান্য খেয়াল ক’রে আমরা যদি দুই বাঙলার বাউলসঙ্গীত শুনি, তবে সহজেই আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাউল থেকে পূর্ববঙ্গের বাউলের কিছু পার্থক্য আলাদা করতে পারবো। ঝুমুরের চাঞ্চল্য ও ঢপকীর্তনের সুরমাধুর্য পশ্চিমবঙ্গের বাউলকে করেছে গতিশীল। এই পশ্চিমবঙ্গেই একদিন কীর্তনের জন্ম হয়েছিলো, এবং কালে তার প্লাবন ছড়িয়ে পড়ে সারা বাঙলায়। বাংলাদেশের বাউলেও তাই কীর্তন ক্রিয়াশীল। কিন্তু এখানকার ভাটিয়ালির নিমগ্নতাকে সে পুরোপুরি ভাঙতে পারিনি। এই ভাটিয়ালির গুণেই বাউলসম্রাট লালনের আমি অপার হয়ে ব’সে আছি, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে, রাখিলেন সাঁই কূপজল ক’রে ইত্যাদি গান এমন ঐকান্তিক ও হাহাকারময় হয়ে উঠেছে। জয়তু ভাটিয়ালি!
পুনশ্চ ২ রবীন্দ্রমানসে ভাটিয়ালির প্রভাব কতোটুকু, তার কিছুটা হলেও আমরা বুঝতে পারবো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের তত্ত্বতালাশ নিলে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে কবিগুরু তাঁর 'আমার সোনার বাংলা' গানটি রচনা করেন শিলাইদহের চারণ গগনচন্দ্র দামের 'আমি কোথায় পাবো তারে'-র অনুকরণে। গগনচন্দ্র দাম সাধারণ্যে গগন হরকরা নামে সমধিক পরিচিত। আমরা অনেকেই জানি, রবীন্দ্রনাথ নিজেও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় বাউলসঙ্গীত থেকে তাঁর নানা ধারের কথা বিভিন্ন ভাবে স্বীকার করেছেন। মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন সংগৃহীত বাউলসঙ্গীতের সঙ্কলন 'হারামণি (প্রথম খণ্ড)’-এ কবির আশীর্বাণীতে বাউলের সুর থেকে তাঁর ঋণ-গ্রহণের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি 'আমি কোথায় পাবো তারে' গানটির উল্লেখ আছে। তবে রবীন্দ্রনাথ ও আরও অনেকের সঙ্গে আমি সহমত নই যে, ‘আমার সোনার বাংলা' গানটি বাউলাঙ্গের। 'বাউল' কোনো সাঙ্গীতিক ঘর-ঘরানা বা প্রকরণের নাম নয়। বাউল বস্তুত একটি প্রতিবাদী ও সমন্বয়পন্থী সাধক-সম্প্রদায়। বাউলের প্রধান আচার তার গান ও প্রধান করণ গুহ্য দেহ-সাধনা। নিজস্ব রূপকের মাধ্যমে বাউল সাধারণের বোধঅগম্য অথচ লোভনীয় একটি সান্ধ্য ভাষায় রচনা করে তার দেহতাত্ত্বিক গানের বাণী, এবং ভাটিয়ালি, কীর্তন, ঝুমুর ইত্যাদি সঙ্গীতের মাধ্যমে সেই গানের মর্মার্থ সে পৌঁছে দেয় পিপাসু শ্রোতার কাছে। কাজেই কোনো গানকে আমরা যখন 'বাউল' অভিধা দিয়ে থাকি, সেটি দিই তার বিষয়ের বিচারে, সাঙ্গীতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নয়। বাউল গানের আবশ্যক প্রসঙ্গ দেহতত্ত্ব, কখনো-কখনো সর্বধর্ম-সমন্বয়। অথচ রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটি দেশাত্মবোধক। এই যুক্তিতেই আমরা নিঃসন্দেহ হতে পারি, আলোচিত গানটি বাউলাঙ্গের নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ভাটিয়ালি। গানটিতে মিশ্র খাম্বাজের লক্ষণ আলাদা করবার মতো। অধিকাংশ ভাটিয়ালিও খাম্বাজে বা মিশ্র খাম্বাজে বাঁধা হয়, এবং ভাটিয়ালির একটি উল্লেখযোগ্য স্বর কোমল নিষাদ। কখনো-কখনো শুদ্ধ ও কোমল উভয় নিষাদই ব্যবহৃত হয় ভাটিয়ালিতে। এখানে লক্ষ্য করবার মতো, সমগ্র ভাটি-অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজ পর্যন্ত নামান্তরে প্রধানত নিষাদ জনগোষ্ঠী বাস ক'রে আসছে। সে যাই হোক, 'আমার সোনার বাংলা' গানটিতে শুদ্ধ ও কোমল উভয় নিষাদের লক্ষণীয় উপস্থিতির পাশাপাশি পূর্বে আলোচিত ভাটিয়ালির অপরাপর লক্ষণও বিদ্যমান। অতএব রবীন্দ্রনাথ যাকে 'বাউল' নামে চিনেছেন, সেটি মূলত ভাটিয়ালি, ঢপকীর্তন, ঝুমুর বা মিশ্র ভাটিয়ালি-কীর্তন।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের উপর রবীন্দ্র-পূর্বসূরিদের প্রভাব সম্পর্কে আমার আর একটি পাঠ এখানে অনুষঙ্গ হিসাবে উপস্থাপন করবো। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের জন্য সুর ধার করেছিলেন মরমী কবি গগন হরকরার কাছ থেকে, এবং গগন তাঁর গানের বাণীর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন, আমার ধারণা, কবিরসরাজ তারকচন্দ্র সরকারের নিকট থেকে। তারকচন্দ্র সরকার ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন যশোর জেলার জয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি এখন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার অন্তর্গত। কবিগানের জগতে তিনি পিতামহতুল্য ও প্রবাদপ্রতিম। তিনি তাঁর সমকালে খ্যাতিমান কবিয়ালদের অন্যতম ছিলেন, এবং পদ্মার দক্ষিণে হরিবর সরকার, মনোহর সরকার, অশ্বিনী গোঁসাই, বিজয় সরকার, রসিক সরকার, অনাদিজ্ঞান সরকার হয়ে অদ্যাবধি প্রায় সমস্ত কবিয়ালেরই তাঁর সঙ্গে শিষ্য-পরম্পরাগত সম্পর্ক। সারা বাঙলায় ভাটিয়ালির অন্যতম ধরণ ধুয়োগান প্রসারে তাঁর ভূমিকা পথিকৃতের। তাঁর প্রচুর গান এখনও অনেক এলাকায় প্রায় সমান জনপ্রিয়তায় নিয়মিত  গাওয়া হয়। গগন হরকরারও জন্ম তারক সরকারের সমকালে– আনুমানিক ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে। শ্রীশচীন্দ্রনাথ অধিকারী তাঁর 'শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ' গ্রন্থে গগন সম্পর্কে লিখেছেন, “তিনি শিলাইদহে সখীসংবাদের গানে এমন করুণ আখর লাগিয়ে গাইতেন যে, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনত।" আমরা জানি, কবিগানের অন্যতম একটি অংশের নাম 'সখীসংবাদ'। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, গগন সম্ভবত কবিগানও করতেন। তাঁর বিখ্যাত পদ 'আমি কোথায় পাব তারে'-তে কবিগানের ডাকধুয়ো-সদৃশ 'মরি হায়, হায় রে'-র পৌনঃপুনিক ব্যবহার আমাদের প্রতীতিটিকে আরও দৃঢ়মূল করে। শাব্দিক অর্থে 'মরি হায়, হায় রে' পদবন্ধটি বিস্ময়বোধক অথবা ব্যঙ্গাত্মক। অপরদিকে গানটির মূলভাব শোক। কাজেই গানটির সঙ্গে পদবন্ধটির অর্থগত কোনো যোগ নেই, যোগটি মূলত শাস্ত্রীয় বা পদ্ধতিগত। আমরা এই আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, গগন হরকরা স্বল্প-পরিচিত হলেও একজন কবিয়াল ছিলেন, এবং তাঁর সঙ্গে কবির আসরে সময়ের অন্যতম মেধাবী কবিয়াল তারক কর্তার সাক্ষাৎ ঘটাটাও অস্বাভাবিক নয়। এমনিতেও লোহাগড়া ও শিলাইদহের মধ্যকার দূরত্ব তেমন বেশি কিছু নয়। সে যাই হোক, গগন হয়তো কখনো তারকের "আমার মন নিলো যে-জন হরে, / পাই কোথায় তারে..." ধুয়োগানটি শুনে থাকবেন এবং মুগ্ধ-অনুপ্রাণিত হয়ে 'আমি কোথায় পাবো তারে' পদটি বেঁধে থাকবেন। তারক কর্তার গানের একটি জায়গায় আছে, “বুকে ধানটা দিলে হয় পোড়া খই, সইরে– / তোরা দেখ না আমার বুক ধ'রে।" এই অসাধারণ বাক্‌প্রতিমাটির দুর্বল অনুকৃতি ঘটেছে গগনের গানে, “আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে, নিভাই অনল কেমন করে, / মরি হায়, হায় রে– / ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে / দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।" দুটি গানেরই স্থায়ীভাব শোক, বিভাব রূপানুরাগ, এবং অনুভাব বিরহ-জনিত দৈন্য, বিলাপ ও সঙ্গলিপ্সা। উপরন্তু, গানদুটিতে দিবানিশি, নয়ন, আমার মন, মজে না / মজেছে, মানুষ, হায়রে, পাই কোথায় তারে / কোথায় পাব তারে, তোরা দেখ না আমার বুক ধ'রে / দেখ না তোরা হৃদয় চিরে-র মতো কিছু সাধারণ পদ, পদবন্ধ ও বাক্য আছে। অতএব এতক্ষণে এই উপসংহারে উপনীত হওয়া সম্ভব যে, গানদুটির একটির বাণী হয়তো আরেকটি দ্বারা প্রভাবিত।
আমরা এখন আলোচিত তিনটি গান একনজর দেখে নেবো এবং নিজেরাই পূর্বের আলোচনা মাথায় রেখে অনুসরণ-পরম্পরার গতিমুখ অনুধাবনের চেষ্টা করবো।
ক।  পাই কোথায় তা���ে | তারক সরকার (১৮৪৭ - ১৯১৪)
আমার মন নিলো যে-জন হ'রে,পাই কোথায় তারে। আমি তারই দাসী দিবানিশি, সইরে– আমার তার জন্যে নয়ন ঝরে॥
অরুণ নয়ন যার ভুরু বাঁকা, হাতে-পায়ে ঊর্দ্ধ রেখা, যেনো চাঁদ হিঙ্গুল মাখা, হলো কী ক্ষণে তার সঙ্গে দেখা, সইরে– নিলো সেই হতে পাগল ক'রে॥
আমি গৃহী কি বনচারী, সন্ন্যাসী কি ফকিরি– কিছু বুঝতে না পারি, আমি কী করিতে কী না করি, সইরে– আমি চিনতে নারি আমারে॥
যতো ধর্ম-কর্ম জগতে, সাধন-ভজন সাধুতে করে বেদবিধি মতে, আমার মন মজে না তার কিছুতে, সইরে– কেবল চায় সে প্রাণনাথেরে॥
তোরা গৃহে যেতে বলিস সই, কী ধন লয়ে গৃহে রই, আমার সাধনের ধন কই, বুকে ধানটা দিলে হয় পোড়া খই, সইরে– তোরা দেখ না আমার বুক ধ'রে॥
মহানন্দ কয়, মানুষ রতন পেলো গোলোক-হিরামন, তারা জুড়ালো জীবন, তারক নাই তোর সাধন, করগে রোদন, হায়রে– গুরুচাঁদের চরণ ধ'রে॥
খ।  আমি কোথায় পাব তারে | গগন হরকরা (১৮৪৫ - ১৯১০)
আমি কোথায় পাবো তারে, আমার মনের মানুষ যে রে– হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে।
লাগি সেই হৃদয়শশী সদা প্রাণ হয় উদাসী, পেলে মন হতো খুশি, দিবানিশি দেখতাম নয়ন ভরে। আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে, নিভাই অনল কেমন ক'রে, মরি হায়, হায় রে– ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।
দিবো তার তুলনা কী, যার প্রেমে জগৎ সুখী হেরিলে জুড়ায় আঁখি, সামান্যে কি দেখিতে পারে তারে। তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে মরি হায়, হায় রে– ও সে না জানি কি কুহক জানে, অলক্ষ্যে মন চুরি করে, কটাক্ষে মন চুরি করে।
কুলমান সব গেলো রে, তবু না পেলাম তারে– প্রেমের লেশ নাই অন্তরে, তাইতে মোরে দেয় না দেখা সে রে। ও তার বসত কোথায় না জেনে তায় গগন ভেবে মরে, মরি হায়, হায় রে– ও সে মানুষের উদ্দিশ যদি জানিস কৃপা ক'রে ব’লে দে রে, আমার সুহৃদ হয়ে ব'লে দে রে, ব্যথার ব্যথিত হয়ে ব'লে দে রে।
গ।  আমার সোনার বাংলা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ - ১৯৪১)
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে– ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো– কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে– মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে– তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে– ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি‌॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে– দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে– আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি॥
ঋতুসার। ১ অগ্রহায়ণ ১৪২২। রবিবার। বাঙলাপাঠ। খুলনা
0 notes
banglapath · 7 years
Text
বাঙলা কোষগ্রন্থের তালিকা ১
০১। বাঙ্গালা ভাষার অভিধান | শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস | সাহিত্য সংসদ ০২। বঙ্গীয় শব্দকোষ | হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় | সাহিত্য অকাদেমি ০৩। বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান | ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ০৪। বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান | ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী ০৫। বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক অভিধান | গোলাম মুরশিদ ০৬। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান | জামিল চৌধুরী ০৭। বাংলা একাডেমি  ঐতিহাসিক অভিধান | মোহাম্মদ মতিওর রহমান ও মনজুরুর রহমান ০৮। বাংলা উচ্চারণ অভিধান | নরেন বিশ্বাস | বাংলা একাডেমি ০৯। বাংলা একাডেমি বানান অভিধান | জামিল চৌধুরী ১০। বাংলা একাডেমি আরবি-বাংলা অভিধান ১১। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবি ফারসি উর্দু শব্দের অভিধান  | ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদ | বাংলা একাডেমি ১২। বাংলা ভাষায় আরবী ফারসী তুর্কী হিন্দী উর্দু শব্দের অভিধান | কাজী রফিকুল হক | বাংলা একাডেমি ১৩। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান | ড. মুহম্মদ আবদুল কাউম ও ড. রাজিয়া সুলতানা | বাংলা একাডেমি ১৪। গার্হস্থ্য অর্থনীতি পরিভাষা | হুসনা বানু খানম ও অন্যান্য | বাংলা একাডেমি ১৫। জীবপ্রযুক্তি শব্দকোষ  | ড. সামসুদ্দিন আহমদ| বাংলা একাডেমি ১৬। বাংলা একাডেমি সমাজবিজ্ঞান শব্দকোষ ১৭। বাংলা একাডেমি আইনকোষ ১৮। পদার্থবিজ্ঞান শব্দকোষ | মাধব রায় | বাংলা একাডেমি ১৯। বাংলা একাডেমি সঙ্গীতকোষ | করুণাময় গোস্বামী ২০। সঙ্গীত সাধক অভিধান | মোবারক হোসেন খান | বাংলা একাডেমি ২১। বাংলা একাডেমি উদ্ভিদবিদ্যা শব্দকোষ ২২। পার্লামেন্টারি শব্দকোষ | জালাল ফিরোজ | বাংলা একাডেমি ২৩। স্থাপত্য পরিভাষা | মুহম্মদ  মোখলেছুর রহমান ২৪। ব্যবহারিক কম্পিউটার পরিভাষা | মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম | বাংলা একাডেমি ২৫। ব্যবসায় পরিভাষা | ড. এস. এম. মাহফুজুর রহমান | বাংলা একাডেমি ২৬। প্রশাসনিক পরিভাষা | বাংলা একাডেমি ২৭। বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান বিশ্বকোষ | এ. কে. এম. নুরুল ইসলাম ও অন্যান্য ২৮। বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান ২৯। যথাশব্দ | মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান | ইউপিএল ৩০। সংসদ সমার্থশব্দকোষ | সাহিত্য সংসদ ৩১। সংসদ বাংলা অভিধান | শৈলেন্দ্র বিশ্বাস ৩২। সংসদ বাগ্‌ধারা অভিধান | সুভাষ ভট্টা���ার্য ৩৩। সংসদ বানান অভিধান | অশোক মুখোপাধ্যায় ৩৪। সংসদ উচ্চারণ অভিধান | সুভাষ ভট্টাচার্য ৩৫। সংসদ ব্যাকরণ অভিধান | অশোক মুখোপাধ্যায় ৩৬। আকাদেমি বিদ্যার্থী অভিধান | পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ৩৭। আকাদেমি বানান অভিধান | পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ৩৮। ব্যুৎপত্তি-সিদ্ধার্থ | সুকুমার সেন | পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ৩৯। শব্দবোধ অভিধান | আশুতোষ দেব | দেব সাহিত্য কুটীর ৪০। চলন্তিকা | রাজশেখর বসু ৪১। সরল বাঙ্গালা অভিধান | সুবলচন্দ্র মিত্র | নিউ বেঙ্গল ৪২। বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ | কলিম খান ও রবি চক্রবর্তী | ভাষাবিন্যাস ৪৩। পৌরাণিক অভিধান | সুধীরচন্দ্র সরকার | বুক চয়েস ৪৪। লঘুনিরুক্ত | শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ৪৫। শব্দ চয়নিকা | শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ৪৬। অপরাধ-জগতের ভাষা ও শব্দকোষ | ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক | দে'জ পাবলিশিং ৪৭। গালি অভিধান | আবদুল মান্নান স্বপন | ঐতিহ্য ৪৮। বাংলা স্ল্যাং: সমীক্ষা ও অভিধান | অভ্র বসু | প্যাপিরাস ৪৯। ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান | মোশাররফ হোসেন ভূঞা | ঐতিহ্য ৫০। বিয়ের শব্দকোষ | হরিপদ ভৌমিক | গাঙচিল ৫১। জেন্ডারকোষ | নিশাত জাহান রানা‌ ৫২। রাজনীতির অভিধান | সৌরেন্দ্রমোহন গঙ্গোপাধ্যায় ৫৩। রাজনীতি ও কূটনীতিকোষ | ড. সুলতান মাহমুদ ও বিবি মরিয়ম ৫৪। ভারতকোষ | বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ৫৫। বাংলাপিডিয়া | বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ৫৬। রবীন্দ্রশব্দকোষ | শ্রীবীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস | দি ওয়ার্লড প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড ৫৭। লালন শব্দকোষ | রবিশঙ্কর মৈত্রী | র‌্যামন পাবলিশার্স ৫৮। লালনভাষা অনুসন্ধান | আবদেল মাননান | রোদেলা ৫৯। বাংলায় অতিথি শব্দের অভিধান | অজয় দাশগুপ্ত ও মৃণালকান্তি দাশ ৬০। দেশী বাংলা শব্দের অভিধান | রবিশঙ্কর মৈত্রী | অনন্যা ৬১। শব্দসংকেত | জামিল চৌধুরী | দে'জ পাবলিশিং ৬২। বাংলায় প্রচলিত ইংরেজী শব্দের অভিধান | মনসুর মুসা ও মনোয়ারা ইলিয়াস ৬৩। বিদেশী বাংলা শব্দের অভিধান | রবিশঙ্কর মৈত্রী | অনুপম প্রকাশনী ৬৪। শব্দসঞ্চয়িতা | মিলন দত্ত ও অমলেন্দু মুখোপাধ্যায় ৬৫। শব্দসন্ধান শব্দাভিধান | ফণিভূষণ আচার্য ৬৬। লৌকিক শব্দকোষ | কামিনীকুমার রায় ৬৭। শব্দ-সংগ্রহ | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৬৮। মক্তব অভিধান | কাজী ওয়ায়েজউদ্দীন আহমদ ৬৯। সরল বাঙালা অভিধান | প্রকাশচন্দ্র দত্ত ৭০। আধুনিক বাংলা বানান-অর্থ-উচ্চারণ অভিধান | রবিশঙ্কর মৈত্রী | অনুপম প্রকাশনী
0 notes