জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জা��়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। ��েহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্ল���ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
🤍💛Our silk wedding dresses are aimed at the modern bride who wants a sophisticated garment for their wedding day.🌹♥️ . . . #silkweddingdresses #silk #wedding #dresses #modern #bride #whowants #sophisticated #garment #yourweddingdresses #cologne #germany (hier: Köln-Innenstadt) https://www.instagram.com/p/Cf1pHE-sK--/?igshid=NGJjMDIxMWI=
0 notes
GAMERS does any1 want2 becomepirates w/meadn build a litleship adn watch swag lil movies in the shipslower deck:3333333 ^_^^
8 notes
·
View notes
IMBACK. hiii
13 notes
·
View notes
walking up to the atIus localization casting office with this in a usb drive
9 notes
·
View notes
my head is throbbigb i am going to take a whole ibuprofen bottle /j
2 notes
·
View notes
14 notes
·
View notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে প��ণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জ��ন্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
of Allah in Paradise
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
��াসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মানিত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
#The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
0 notes
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
যে নারী জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন
প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল। তার স্বামী ফেরাউন নিজেকে খোদা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। আসিয়া ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। তিনি এক আল্লাহর ওপর ইমান আনেন। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে— এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পর্বতের মতো অবিচল, অটল। ফেরাউন বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। ক্ষতবিক্ষত করা হয় শরীর। তবুও তিনি ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমান রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)
আর যারা ঈমান আনে তাদের জন্য আল্লাহ ফির‘আউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করেন, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার কাছে আমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করুন এবং আমাকে ফির‘আউন ও তার কর্ম হতে নাজাত দিন, আর আমাকে নাজাত দিন যালিম সম্প্রদায় হতে। ✓ সূরা তাহরিম, আয়াত:- ১১
আসিয়া বিনতে মুজাহিম। প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের (দ্বিতীয় রামেসিস) স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন এক আল্লাহ বিশ্বাসী মহীয়সী নারী। ছিলেন মানুষের প্রতি দয়ালু ও সহানুভূতিশীল।
তাঁর স্বামী ফেরাউন নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করত। সে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি বাদশাহ। অহংকার, দম্ভ ও অহমিকায় পরিপূর্ণ ছিল মসনদ।
সে সময় মানুষকে আল্লাহ বিশ্বাসী ও ফেরাউনের উদ্ধত অত্যাচার থেকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে নবী মুসা (আ.) আগমন করেন।
আল্লাহ মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহর আদেশে শিশু মুসার মা তাকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কাঠের সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই সিন্দুক ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার হস্তগত হয়। শিশু মুসার অপূর্ব সুন্দর চেহারা আসিয়ার মনে দাগ কাটে।
মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। সে তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পুত্রসন্তান দেখে ফেরাউন চটে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ব্যক্তিত্বের কাছে সে হেরে যায়। আসিয়ার কাছে রাজকীয় সুখানন্দে মুসা লালিত-পালিত হতে থাকেন।
আসিয়া লাভ করেন মুসা (আ.)-এর পালকমাতা হওয়ার গৌরব। কোরআনে এসেছে, ‘ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার চোখ শীতলকারী। তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৯)
আসিয়া ছিলেন ধনী পরিবারের মেয়ে। ভদ্র, শালীন, দয়ালু ও জ্ঞানী। ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন ঠিকই কিন্তু ফেরাউনের দুশ্চরিত্রের কোনো স্বভাব তাকে গ্রাস করতে পারেনি। অত্যাচারীর ঘরে থেকেও তিনি ছিলেন মানবতাবাদী ও মানুষের হিতৈষী। ছিলেন একজন নবীর পালকমাতা। এসব বিশেষ গুণই তাকে এক আল্লাহ বিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে। তিনি মুসা (আ.)-এর ধর্মগ্রহণ করেন। এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। এদিকে ফেরাউন ছিলেন মুসা (আ.)-এর পরম শত্রু। নিজের স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে—এমন খবর জানতে পেরে ফেরাউন স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। নিজের বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রজাদের কথা বলেন। কিন্তু আসিয়া সত্য ধর্মের ওপর পাহাড়ের মতো অবিচল, অটল।
ফেরাউন দেখল, কাজ হয় না। স্ত্রী ফিরে আসছে না তার দলে। সে বিশেষ লোকদের সঙ্গে পরামর্শ করে আসিয়াকে হত্যার আদেশ দেয়। ফেরাউনের সৈন্য-সামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখে। অন্যদের চেয়ে কঠিন শাস্তি দেয় তাঁকে। দেহ রক্তাক্ত হয়। ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তিনি ধৈর্যহারা হননি। ঈমান ছাড়েননি। জীবনের বিনিময়ে ঈমানকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন জান্নাতে আল্লাহর পাশে একটি ঘর। আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেন। তাঁর প্রার্থনার কথা কোরআনে বাঙময় হয়েছে এভাবে—‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে মুক্তি দিন অত্যাচারী সম্প্রদায় থেকে।’
(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ১১)
আল্লাহ আসিয়াকে সম্মা��িত করেছেন। তাঁর প্রতি খুশি হয়েছেন। কোরআনে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তী জাতির জন্য তাঁর জীবনে শিক্ষা রেখেছেন। জান্নাতে যাওয়ার পাথেয় রেখেছেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর সম্পর্কে উত্তম ধারণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পুরুষদের মধ্যে অনেকে পুণ্য অর্জন করেছেন। তবে নারীদের মধ্যে পুণ্য অর্জন করেছেন শুধু মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া...।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১১)
জান্নাতবাসী নারীদের মধ্যে আসিয়া শ্রেষ্ঠ নারীর একজন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখে টেনে বলেন, তোমরা কি জানো এটা কী? সাহাবারা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল জানেন। রাসুল (সা.) বলেন, জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হলেন খাদিজা বিনতে খু��য়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৯০৩)
দুনিয়ার বাড়ি ক্ষণস্থায়ী। পরিপূর্ণতা তো কেবল জান্নাতে। আখেরাতের হিসাবই আলাদা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান (দুনিয়ার) যেসব বস্তুর ওপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে, সেসব বস্তুর চেয়েও উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ২৭৯৩
দুনিয়ার সব প্রাসাদের মূল্য জান্নাতের একটি ইটের দামের সমান নয়। জান্নাতে কোনো রোগ-শোক নেই, না পাওয়ায় হতাশা কিংবা বেদনা নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে খেতে পারবেন। জান্নাতের বাড়ি আপনাকে কখনো ছাড়তে হবে না। জান্নাতে মৃত্যু নেই।
জান্নাতে বাড়ি বানানোর সহজ কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো-
সুরা ইখলাস দশবার পড়া : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস দশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেবেন।’ -জামে আস সাগির : ১/১১৪২
মসজিদ নির্মাণ : দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ বানানো অনেক বড় ফজিলতের কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করে, যদিও তা চড়–ই পাখির বাসার মতো হয়, কিংবা আরও ছোট হয়, তবুও মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।’ -ইবনে মাজাহ : ৭৩৮
১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ : দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বারো রাকাত নামাজ হলো- ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত, জোহরের ফরজের আগে ৪ আর পরে ২ রাকাত, মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত আর এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন কোনো মুসলিম নেই, যে প্রতিদিন ফরজ নামাজ ছাড়া বারো রাকাত অতিরিক্ত সুন্নত (সুন্নতে মোয়াক্কাদা) নামাজ পড়ে আর আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি নির্মাণ করে দেন না।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/১৪০
নামাজের কাতার পূর্ণ করা : জামাতে নামাজ আদায়ের সময় খালি কাতার ভরাট করা। জামাতের সময় মসজিদে আমরা প্রায়ই খালি সারি দেখি কিংবা সারির মাঝে ফাঁকা রয়েছে। আমরা আমাদের আরামদায়ক জায়গা ছেড়ে খালি জায়গা ভরাট করতে এগিয়ে যাই না, অপেক্ষা করি অন্য কেউ এসে স্থানটি পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জামাতের খালি জায়গা ভরাট করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেবেন।’ -সহিহ আত তারগিব : ১/৩৩৬
তর্ক পরিহার : নিজে সঠিক থাকার পরেও তর্ক পরিহার করলে, তার জন্য আল্লাহতায়ালা বেহেশতে একটি ঘর বানানোর হুকুম দেন।
মজার ছলেও মিথ্যা নয় : অনেকে মজার ছলে মিথ্যা বলে। এটা মারাত্মক গোনাহ। ইসলামের শিক্ষা হলো- মজার ছলেও মিথ্যা না বলা। এ কাজ না করলে তার জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি বাড়ি বানিয়ে দেবেন।
উত্তম চরিত্র : উত্তম আখলাক বজায় রাখা অনেক ফজিলতের আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক যুক্তি থাকা সত্ত্বেও বিবাদে লিপ্ত হয় না। জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে কখনো ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। আর জান্নাতের ঊর্ধ্বাংশে একটি বাড়ি তার জন্য, যে নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০
বাজারে দোয়া পাঠ করে প্রবেশ করা : হাদিসে বাজারকে দুনিয়ার সর্ব নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই বাজারে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া। বাজারে প্রবেশের দোয়ায় রয়েছে অনেক ফজিলত। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিই বাজারে প্রবেশ করে (বাজারে প্রবেশের দোয়াটি) পড়বে,আল্লাহ ওই ব্যক্তির আমলনামায় ১০ লাখ নেকি লিখে দেন এবং দশ লাখ গোনাহ মাফ করে দেন। আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪২৮
যে কারণে আল্লাহর প্রতিবেশী হবেন ফেরাউনের স্ত্রী
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছিলেন যে নারী
আল্লাহর প্রতিবেশী কারা?
আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী কারা
জান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী
The woman who wants to be a neighbor of Allah in Paradise
জান্নাতে আল্লাহরপ্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যিনি
0 notes
saw this in the previews and thought "his hubris is immense" which is hilarious to me
5 notes
·
View notes
george talking about lubed up fingers….he’s so gay
HES SO GAYYYYY
2 notes
·
View notes